চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে মধ্যরাতে আপত্তিকর অবস্থায় প্রতিবেশী গৃহবধূর ঘরে এক মাদরাসা শিক্ষককে আটক করেছে এলাকাবাসী। পরে ওই নারী ও মাদরাসা শিক্ষক দুজনকে বাড়ির সামনের বাঁশের খুঁটিতে সারারাত-সারাদিন একসাথে বেঁধে রাখে গ্রামবাসী। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দিবাগত মধ্যরাতে শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের জাবড়ী কাজীপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আটককৃত মাদরাসা শিক্ষক মো. জিয়াউর রহমান আনজুস (৪৫) একই এলাকার মৃত সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে ও চৈতন্যপুর আলিম মাদরাসার ক্রীড়া শিক্ষক।
জানা যায়, মাদরাসা শিক্ষক জিয়াউর রহমান আনজুসকে রাত ১১টার দিকে প্রতিবেশী গৃহবধূ সুমেরা খাতুনের বাড়িতে ঢুকতে দেখেন স্থানীয়রা। এনিয়ে সন্দেহ হলে রাত ১২টার দিকে স্থানীয়রা তাদেরকে ঘরের মধ্যে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায়। পরে জনসাধারণের উপস্থিতি টের পেয়ে পালাতে গেলে আটক করে স্থানীয়রা। আটকের পর তাদের দুজনকেই বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। পরদিন বিকেলে (শুক্রবার) ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী তরিকুল ইসলাম বলেন, মাদরাসা শিক্ষক জিয়াউর রহমান আনজুস ও সুমেরা খাতুনের বাড়ি পাশাপাশি। তার স্বামী বাসায় থাকে না। স্থানীয় এক যুবক আনজুসকে রাতে সুমেরার বাসায় ঢুকতে দেখে। এরপর এক ঘন্টা পর জানালা দিয়ে তাদের দুজনকে এক ঘরে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে কয়েকজন। পরে আমাকেসহ আরও কয়েকজনকে দেখে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির ছাদ থেকে আনজুসকে আটক করি।
স্থানীয় যুবক তারেক রহমান জানান, স্থানীয় লোকজন রাত থেকেই দুজনকে একসাথে আটকে রেখে বেঁধে রাখে। পরে বিকেলে পুলিশ এসে তাদেরক ছুটিয়ে নিয়ে যায়। বেঁধে রাখা অবস্থায় তাদের দুজনকে মারধর করে স্থানীয় জনতা। জানা গেছে, স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগে দীর্ঘদিন ধরে পরকিয়া সম্পর্কে ছিল তারা দুজন। মাঝেমধ্যেই রাতে দুই সন্তানের জননী ওই মহিলার বাসায় যাওয়া আসা ছিল আনজুসের। মাদরাসা শিক্ষক জিয়াউর রহমান আনজুস দুই সন্তানের জনক ও বর্তমানে ডিভোর্স অবস্থায় রয়েছে।
ধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, সকালে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের উদ্দেশ্যে বসা হয়। কিন্তু স্থানীয় জনতার তীব্র বিরোধের মধ্যে সালিস করা যায়নি। এমনকি সালিশদারগণ স্থানীয়দের প্রতিবাদের মধ্যেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে বিকেলে পুলিশ এসে তাদেরকে ছুটিয়ে যায়।
এবিষয়ে চৈতন্যপুর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ সাদিকুল ইসলাম জানান, ঘটনটি তার (জিয়াউর রহমান আনজুস) এলাকায়। এতে মাদরাসার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না তা বলা মুশকিল। তবে এনিয়ে মাদরাসা কমিটির সাথে আলোচনা করে সীদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তবে পরকিয়া ও আপত্তিকর অবস্থায় আটকের অভিযোগ অস্বীকার করেন চৈতন্যপুর আলিম মাদরাসার শিক্ষক জিয়াউর রহমান আনজুস। তিনি বলেন, রাতে আম কুড়াতে যাওয়ার সময় কয়েকজন ব্যক্তি আমাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর জন্য জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। পরে ওই নারীর সাথে পণকিয়ার অভিযোগ দিয়ে বেঁধে রাখে। এনিয়ে আমি প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া বলেন, আটক করে বেঁধে রাখার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এনিয়ে শনিবার (৩১ মে) বিকেল পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply